আজ ৭ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ২১শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

শেষ পর্যন্ত ভালোভাবেই অপারেশনটা হয়েছে

জনতার ডেক্স : ইদানীং কেন যেন শরীরটা তেমন ভালো যাচ্ছে না। ছোটখাটো এটাওটা লেগেই আছে। ২১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। ২০ তারিখ টাঙ্গাইল থেকে ফিরে ভালো লাগছিল না। তাই ভর্তি হয়েও সেদিন হাসপাতালে যাইনি। গিয়েছিলাম পরদিন সকালে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২৩ মার্চ মঙ্গলবার। এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে বড় বেশি আদরযত্ন পেয়েছি, ভালোবাসা পেয়েছি। সবাই কেন যেন আপনজনের মতো দেখাশোনা করেছেন, সেবাযত্ন করেছেন। আত্মার আত্মীয়ের মতো ব্যবহার করেছেন। হাসপাতালের বেডে থাকতেই হঠাৎ চোখে পড়ে সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লার মানুষের চোখে পানি। ফসল ভেসে যাচ্ছে। নারী-পুরুষ মাঠের দিকে তাকিয়ে অঝরে কাঁদছে আর কাঁদছে। ধনী-গরিব একাকার। সবার কান্না দেখে বুক উথালপাথাল করে ওঠে। কাকে বোঝাব মানুষের চোখের পানির মূল্য কত। মোগল সম্রাট শাহজাহানের রাজমুকুটে শোভা পাওয়া কহিনুরের চাইতেও যে কারও কাছে কারও চোখের এক ফোঁটা পানির মূল্য অনেক বেশি এটা বুঝবার মানুষ কই। বঙ্গবন্ধু নেই, মওলানা ভাসানী নেই, শেরেবাংলা নেই, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী নেই। কে বুঝবে গরিবের চোখের পানির মূল্য। এমনিতেই হাসপাতালে ভালো লাগে না। তার ওপর পত্রপত্রিকা, রেডিও-টেলিভিশনে মানুষের দুর্দশার কথা শুনে চরম দুর্দশা দেখে মন আকুল হয়ে যায়, হৃদয় ভেঙে তছনছ হয়ে যায়। ছবিতে দেখি দড়ির মতো ৭-৮ ফুট পাশ বাঁধ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন ইঁদুরে, কাঁকড়ায় বাঁধ ফুটো করে দিয়েছে। তা কেন হবে। ৭-৮ ফুট পাশের বাঁধ না বানিয়ে ৩০০-৪০০ ফুট পাশের সুদীর্ঘ বাঁধ বানিয়ে তার দুই পাশে ১০০ ফুট করে সাধারণ মানুষের বসতবাড়ি করে দিলে কী এমন ক্ষতি। আমরা কর্ণফুলীতে পানির নিচ দিয়ে টানেল বানাতে পারি, পদ্মা সেতু বানাতে পারি, যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু তৈরি করতে পারি। আবার তার উত্তরে শুধু রেলসেতুর কাজ চলছে। যেখানে অনায়াসে আরেকটি সড়কসেতু বানাতে পারতাম। কিন্তু হাওরের মানুষের কান্না বন্ধ করতে পারি না, বন্ধ করার কথা চিন্তাও করি না। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ফেরাতে পদ্মা প্রকল্পের ১০ ভাগের ১ ভাগ অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন নেই। সামান্য একটু যত্ন নিলে তিস্তায় ভারতের গজলডোবা বাঁধ থেকে যখন পানি ছেড়ে দেওয়া হয় তখন সেখানে সাধারণ কৃষক, নর-নারী-শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধার সে যে কি বুকফাটা কান্না আমরা বন্ধ করার একটু চিন্তাও করি না। সামান্য একটু চিন্তা করলেই হাওরের কান্না বন্ধ করা যায়, দক্ষিণে সমুদ্রপাড়ের সাধারণ মানুষের চোখের পানি মুছে দেওয়া যায়। বাঁধের দুই পাশে ৩০-৪০ ইঞ্চি কংক্রিটের প্রাচীর গড়ে দিলে বন্যার পানি বাঁধ ভেঙে ফসলি জমিতে প্রবেশের আর কোনো সম্ভাবনাই থাকে না। এটা দক্ষিণে সমুদ্রের পাড় ঘেঁষেও সুতার মতো বিঘতপুরো বাঁধের চাইতে একই রকম বড়সড় ২০০-৩০০ ফুট প্রশস্ত বাঁধ নির্মাণ করলে বছর বছর খেতের ফসল নষ্ট হওয়ার হাত থেকে সাধারণ মানুষ পরিত্রাণ পায়। এভাবে বিকালের হাসিমুখ সন্ধ্যা বা রাতেই ম্লান হয়ে যেত না। সেদিন হাসপাতালে অপারেশনের সেলাই কাটার সময় কয়েকজন প্রবীণ ডাক্তার বলছিলেন হাওরে বাঁধ রক্ষায় বরাদ্দ খুব একটা কম নয়। কোটি টাকা বরাদ্দ হলে ৫-১০ লাখের কাজ হয়। পরদিনই টিভিতে দেখলাম বানভাসি মানুষের অভিযোগ, যেখানে ২৫ লাখ বরাদ্দ সেখানে কাজ হয়েছে ৫ লাখের, ৩৫ লাখের বরাদ্দ যেখানে সেখানেও সেই ৫ লাখ। মাঝেমধ্যে গণরোষের হাত থেকে বাঁচার জন্য চোরদের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়। কিন্তু তেমন কেউ দোষী হয় না। এটা চলছে যুগের পর যুগ। পাকিস্তান আমলে, ব্রিটিশ আমলে একই খেলা হয়েছে। এখনো সে খেলা থামেনি। জানি না কবে প্রিয় বোন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি পড়বে। এদিকে নাকি একবারে কোনো সমাধান হলে ইঁদুর-বাঁদর-বাইতানদের বছর বছর বাঁধ নিয়ে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই ভালোভাবে কোনো কিছু করেন না। করতে গেলেও নানা কৌশলে বাধার সৃষ্টি করে। অনেক কিছু ঠিক বোঝা যায় না কোথায় আসল রহস্য লুকিয়ে। মানুষকে বন্দি করে যারা যুগের পর যুগ বছরের পর বছর শোষণ চালাচ্ছে, মানুষ মুক্ত হলে তাদের কামাই-রুজি হুমকিতে পড়বে সেজন্যই কি এমন অশুভ পাঁয়তারা? বড় ভারাক্রান্ত ছিন্নভিন্ন মন। আল্লাহ কবে যে এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেবেন তিনিই জানেন।

হাওরে বন্যায় মানুষের হাহাকার নিয়ে যখন পেরেশান তখন হঠাৎই হুজুর মওলানা ভাসানীর মেয়ে মনোয়ারার ফোন। আনোয়ারা, মনোয়ারা দুই বোন। মনোয়ারা তেমন খুব একটা আসেনি। কিন্তু আনোয়ারা প্রায় দুই যুগ সকাল-বিকাল আসত। আমার স্ত্রী ওকে খুব সম্মান করতেন, ভালোবাসতেন। তার চাহিদা ছিল ১০০০-২০০০ টাকা, শাড়িটা, ব্লাউজটা, ছোটখাটো কোনো কাপড়টা। পাথরাইলের শাড়ি ব্যবসায়ী রঘুকে বলাই ছিল আনোয়ারার জন্য যেন সব সময় বাসায় শাড়ি থাকে। আমরা নানা সময় নানা ভুল করি। কিন্তু আনোয়ারার ব্যাপারে আমার স্ত্রীর কখনো ভুল হয়নি, আমারও হয়নি। একবারও মনে হয়নি ও আমাদের বিরক্ত করে, সময় অসময় বিবেচনা করে না। হঠাৎ যখন আনোয়ারার মৃত্যুসংবাদ পাই আমার স্ত্রী বড় মুষড়ে পড়লেন। আমরা কেউ ভাবিনি আনোয়ারা ওভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে। মনোয়ারা খুব একটা আসেনি। সব মিলে তিন-চার বারের বেশি হবে না। সেই মনোয়ারার ফোন ফরিদ ধরেছিল। অনেকক্ষণ কথা হয়। ফোন ছেড়ে ফরিদ বলছিল, হুজুর ভাসানী সাহেবের মেয়ে মনোয়ারা ভাসানী। তার ছেলে চৌধুরী মাহমুদুল বারী মাশরুম রংপুর হাসপাতালে ভর্তি। দেখাশোনার কেউ নেই, হাতে টাকা-পয়সা নেই। ১০ হাজার টাকা চেয়েছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে ফরিদকে আবার মনোয়ারার ফোন ধরতে বলেছিলাম। ফোন ধরতেই মনোয়ারা বলল, ‘ভাই আমাদের বড় বিপদ। ছেলে নিয়ে রংপুর হাসপাতালে আছি। দেখার কেউ নেই, টাকাপয়সা নেই।’ বলেছিলাম, তুমি নাকি ১০ হাজার টাকা চেয়েছ। আমার কাছে তেমন টাকা নেই। চিন্তা কোরো না, পাঠিয়ে দিচ্ছি। সঙ্গে সঙ্গে মনোয়ারা বলল, ‘না না, ভাই আমি ১০ হাজার বলি নাই, ৫০ হাজার বলেছিলাম।’ হয়তো তাই হবে। ৫০ হাজারের জায়গায় ফরিদ ১০ হাজার শুনেছে। কয়েকজনকে ফোন করেছিলাম। কেউ কেউ সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠিয়েছিল, আবার দু-এক জন পালিয়েও বেরিয়েছে। সে যা হোক, সঙ্গে সঙ্গেই ১০ হাজার টাকা পাঠিয়ে ছিলাম। তার পরদিন ১০ হাজার, তারপর আরও কয়েক হাজার। ফোন ছেড়েই রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের ফোন নম্বর সংগ্রহ করতে বলেছিলাম। ফোন নম্বর দিয়ে সাহায্য করেছিলেন অর্থোপেডিক হাসপাতালের সার্জন অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করেছিলাম। অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. বিমলচন্দ্র রায়, লালমনিরহাট অথবা গাইবান্ধার মানুষ। ওদিককার মানুষ বড় বেশি সহজ-সরল হন। আমার বন্ধু লালমনিরহাটের মজিবর রহমান এমপি যেমন অসাধারণ অমায়িক ছিলেন। তাঁকে বলেছিলাম হুজুর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি চৌধুরী মাহমুদুল বারী মাশরুম আপনার হাসপাতালে ওয়ার্ড-৬, ৩০ নম্বর বেডে ভর্তি। তাকে যত্ন নিয়ে দেখবেন। বর্তমান ক্যাবিনেট সেক্রেটারি আমার ছোট ভাইদের সঙ্গে পড়তেন। একজন খুবই ভালো মানুষ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, অফিসে থাকলে হাই কোর্ট মসজিদে গিয়ে মাঝেমধ্যেই ইমামতি করেন। আমার খুবই প্রিয় দিলু খন্দকারের বড় ভাই খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তাঁকে সর্বমোট ১০-১২ বার ফোন করেছি। তাঁর পাঁচ-ছয় বারই হুজুরের নাতি মাশরুমকে নিয়ে। প্রথম দিন ফোনের পর অধ্যক্ষের সঙ্গে যখন কথা হয় তখন জিজ্ঞেস করেছিলাম তাঁর সঙ্গে ডিজি হেলথের কথা হয়েছে কি না। তিনি বললেন, ‘আমিও দু-তিন দিন ধরে তাঁকে খুঁজে পাচ্ছি না।’ ক্যাবিনেট সেক্রেটারি মনে হয় যাকে যাকে বলা দরকার প্রায় সবাইকে বলেছিলেন। ডিজি হেলথের সঙ্গে আমার যখন কথা হয় তখন তিনিও বলেছিলেন ক্যাবিনেট সেক্রেটারি তাঁকে এ ব্যাপারে বলেছেন। যা হোক, তারপর আবার যখন ক্যাবিনেট সেক্রেটারিকে ফোন করি তিনি দারুণ সাড়া দেন। তিনি বলেন, ‘আমি ডিসিকে বলছি। যাকে যাকে বলা দরকার বলে দিচ্ছি আপনি চিন্তা করবেন না।’ সোমবার সকালে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলাম। কিন্তু ক্যাবিনেট সেক্রেটারিকে পাইনি। ইফতারের পর হঠাৎই খন্দকার আনোয়ারের ফোন, ‘স্যার, আপনি ফোন করেছিলেন?’ তখনো তাঁকে রংপুর মেডিকেলের রোগী হুজুর মওলানা ভাসানীর নাতির কথা বলেছিলাম। তিনি ভীষণ উৎসাহ নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি সব রকমের ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। কিন্তু যাকে নিয়ে এত দায়-দরবার তাকে রক্ষা করা যায়নি। আল্লাহর ধন আল্লাহ নিয়ে গেছেন। মঙ্গলবার সকালে রংপুর মেডিকেলের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. বিমলচন্দ্র রায় ফোন করেছিলেন। অনেকটাই ইনিয়ে বিনিয়ে বললেন, ‘শত চেষ্টার পরও তাকে বাঁচানো যায়নি।’ এমনকি তার বোন মনিকা যে তার সিটের পাশে রাতে ছিল তা-ও বলছিলেন। লাশ নিয়ে যেতে কষ্ট হবে বলে লাশ পৌঁছে দিতে ক্যাবিনেট সেক্রেটারিকে বলেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সব ব্যবস্থা করছি।’ সত্যিই তিনি তা করেছেন। এর আগে তা-ও প্রায় দেড়-দুই যুগ হবে আমার এক সহকর্মী আজিজ বাঙ্গালের বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমমেট ক্যাবিনেট সেক্রেটারি ছিলেন। তাঁর সঙ্গে কয়েকবার কথা হয়েছে। বড় সম্মান দেখাতেন। আর এরপর আমাদের এই খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে খুব ভালো লেগেছে তাঁর আচার-আচরণ-ব্যবহার কর্মতৎপরতা ও ক্ষিপ্রতায়। এর আগে মহান ভারতের শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ক্যাবিনেট সেক্রেটারির সঙ্গে পাঁচ-সাত বার কথা হয়েছে। মনে হতো আমাদের কথা শোনার জন্যই যেন অপেক্ষায় আছেন। কাজও হতো সঙ্গে সঙ্গে। ঢাকা থেকে দুবার মনমোহন সিংহের ক্যাবিনেট সেক্রেটারির সঙ্গেও কথা বলেছি। দেশে ফেরার একেবারে আগে আগে ’৯০-এর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে চন্দ্রশেখরের ক্যাবিনেট সেক্রেটারির সঙ্গেও বেশ কয়েকবার প্রয়োজনীয় কথা হয়েছিল। মনে হয়েছে তার চাইতেও আমাদের ক্যাবিনেট সেক্রেটারি হুজুর মওলানা ভাসানীর অসুস্থ নাতিকে নিয়ে ভালো আচরণ করেছেন, যত্ন নিয়েছেন। এমন কর্মকর্তা কেউ কেউ আছেন বলেই হয়তো এখনো আমরা আছি। আমার সঙ্গে হয়তো অনেকেই একমত হবেন না। কারণ সবার মত এক না, দৃষ্টিভঙ্গিও এক না। ব্যক্তিগত পছন্দ -অপছন্দেরও একটা বিরাট প্রশ্ন আছে। লাশ নিয়ে যখন রংপুর থেকে মনিকা নওগাঁর রানীনগরের গ্রামের বাড়ি করজগ্রাম ফিরছিল তখনো খোঁজ নিয়েছিলাম। তখনই জেনেছিলাম লাশ নেওয়ার জন্য সরকারিভাবেই অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ইদানীং সব কেমন যেন দুই ভাগ হয়ে গেছে আওয়ামী লীগ আর বিএনপি। আওয়ামী লীগের কাছে বিএনপি একেবারে অচ্ছুত, বিএনপির কাছে আওয়ামী লীগ অখাদ্য, আলোচনারই কিছু না। তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে মাশরুমকে নিয়ে। খবর এসেছে নওগাঁ জেলা মহিলা দলের সভাপতি হলেন মওলানা ভাসানীর নাতনি, মাশরুমের বোন সীমা চৌধুরী। সবকিছুই ঠিক আছে। কিন্তু এই সীমা চৌধুরী মাশরুমের খালাতো বোন, আপন বোন নয়। সীমা চৌধুরীর বাবার নাম মোতাহার চৌধুরী, মায়ের নাম আনোয়ারা ভাসানী, মনোয়ারা ভাসানী নয়। মনোয়ারা ভাসানীর স্বামীর নাম মোতাহার চৌধুরী নয়। তার নাম চৌধুরী মোজাহার হোসেন। মা-বাবার নাম বদল করে খালাতো বোনকে মহিলা দলের সভাপতি বানানো মোটেই ঠিক হয়নি। মাশরুমের বাবা মোজাহার, মা মনোয়ারা। তিন ভাই- চৌধুরী মাহমুদুল বারী মাশরুম, চৌধুরী আখতারুজ্জামান, চৌধুরী মেহেবুব হাসান; এক বোন মনিকা। নিউজটা দেখে আমি সত্যিই খুব মর্মাহত হয়েছি। এমন কেন হবে? মানুষের সিমপ্যাথি নষ্ট করতে এমন অপচেষ্টা মোটেই ভালো নয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছি প্রায় এক সপ্তাহ। মোটামুটি ভালোই আছি। আগেই বলেছি, কেন যেন এবার আত্মার আত্মীয়ের মতো সবাই আমার যত্ন নিয়েছেন। অন্যবার মেডিসিনে ভর্তি হলেও এবার সরাসরি সার্জারি বিভাগে প্রো-ভিসি অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে ভর্তি হয়েছিলাম। তিনি যে কি অসাধারণ মানুষ কীভাবে যে যত্ন নিয়েছেন তা কোনোভাবেই কাউকে লিখে বোঝাতে পারব না। অপারেশন করেছেন অধ্যাপক আবুল কালাম চৌধুরী। অপারেশনের আগে কত যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা যার কোনো শেষ নেই। ডা. চৌধুরী মেশকাত আহমেদ ডিএসই পরীক্ষায় অনেক সময় ধরে বহু কিছু দেখেছেন। শেষে তিনি রিমার্ক করেন এক পঁয়ত্রিশ বছরের ডাক্তারের সঙ্গে। বলেন, ‘স্যার, মানুষের হায়াত মওতের কথা বলা যায় না। কিন্তু আপনার হার্টের অবস্থা এই পঁয়ত্রিশ বছরের বাচ্চা ডাক্তারের মতো।’ মেশকাত আমার প্রিয় নাজির আহমেদ রঞ্জুর জুনিয়র হিসেবে কাজ করেছেন। রঞ্জুর খুবই প্রশংসা করলেন। একবার তিনিসহ অনেক ডাক্তার আমার টাঙ্গাইলের বাসায় খেয়েছিলেন তা-ও বললেন।

অপারেশনটা আরও ছয়-সাত মাস আগে করতে পারলে নাকি ভালো হতো। খুবই অভিজ্ঞতাসম্পন্ন অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম চৌধুরী অপারেশন করেছেন। আড়াই ঘণ্টা লেগেছে। আমার পরে যার একই অপারেশন করেছেন তার লেগেছে ২০ মিনিট। আবুল কালাম চৌধুরীর টিমে ছিলেন ডা. হাসনাত, ডা. জিয়া, ডা. সোনিয়া ও ডা. শাহনাজ আরও অনেকে। সর্বোপরি ভিসির কথা কী বলব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সকাল-বিকাল আসা-যাওয়া করতেন। কোনো কিছুর প্রয়োজন আছে কি না, কোনো দরকার না থাকলেও পীড়াপীড়ি করতেন। আমাদের পরিবারের অতি আপনজন অধ্যাপক প্রাণ গোপালের চাইতেও বেশি যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করেছেন এবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ব্রি. জে. ডা. মো. নজরুল ইসলাম খান সম্পর্কে কী বলব, বড় বেশি যত্ন নিয়েছেন। আল্লাহ যেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়কে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাঁর ছায়াতলে রাখেন, হেফাজত করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category