আজ ৭ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, ২১শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ

বাঘা সিদ্দিকী

প্রতিনিধি ইমরান হাসানবাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ হোসেনপুর উপজেলা সভাপতি এস কে শাহীন নবাব বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের স্বাধীনতা সংগ্রামের স্বপ্ন, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের স্মৃতিময় ইতিহাস বলতে গিয়ে অনেকের গল্পই তুলে এনেছিলেন। এর মধ্যে একাত্তরের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে একমাত্র বেসামরিক বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্ত বীর যোদ্ধা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকিকে নিয়ে ‍কিছু কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কাদের সিদ্দিকী বাঘা সিদ্দিকী হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেনিএকজন বেপরোয়া অসীম সাহসী বীর যোদ্ধা ও সংগঠক হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠা করলে ভারতসহ বাইরে তার নাম ছড়িয়ে পড়ে। তিনি ছিলেন লম্বা হালকা-পাতলা আকষণীয় ব্যক্তিত্ব। যিনি একাই তার নেতৃত্বে 10 হাজারের শক্তিশালী গেরিলা যোদ্ধার দল তৈরি করেছিলেন।যেটি কাদেরিয়া বাহিনি নামে পরিচিত লাভ করেছিল। তার বীরত্বের মধ্য দিয়ে তিনি ভারতীয় বাহিনীর কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন ও যুদ্ধে যৌখ সহযোগিতায় সম্মত হন। বাংলাদেশের অভান্তরে থেকে তার পরিচালিত দুধষ গেরিলা যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটা গৌরবময় দিক। পাকিস্তান যখন পরাজয়ের মুখে, মিত্রবাহিনী যখন ঢাকায় প্রবেশের মুখে, তখন পূণ গোয়েন্দা তথ্যের অভাবে ভূল করে প্রায় আZœঘাতি একটা পথ বেছে নিয়ে সরাসরি পাকিস্তানিদের পাতা ফাঁদের ভিতরে পড়তে যাচ্ছিলেন, সেই পথে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী অ্যান্টি পাসোনেল ও অ্যান্টি ট্যাংক, ল্যান্ড মাইন বিছিয়ে রেখিছিল। লাইনের পেছন থেকে বাঘা সিদ্দিকী এই আসন্ন বিপদের খবর জানতে পেরে দুর্দান্ত গতিতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং তার বাহিনী ও ভারতীয় সেনাদের যৌথ পদযাত্রা নিরাপদ রাস্তায় সরিয়ে নেন। সেদিন বাঘা সিদ্দিকীর সময়মতো হস্তক্ষেপের ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও যৌথ বাহিনীর প্রায় 10 হাজার যোদ্ধার জীবন রক্ষা পায়। সঠিক সময়ে কাদের সিদ্দিকী সঠিক সিদ্ধান্ত ও সাহসিকতার জন্য ভারত তাকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরন করেন। কাদের সিদ্দিকী ও তার বাহিনীর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের কাছে অস্ত্র জমাদানের গঠনা বর্ণানা করতে গিয়ে শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবতনের কয়েকদেন পরেই মুক্তিবাহিনী ও মুজিববাহিনীর পল্টনে অস্ত্র জমাদানের নির্দেশ দনে। মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর আহবানে ব্যাপক সাড়া দেন। আগ্নেয়াস্ত্র ও গ্রেনেড তাঁর পায়ের কাছে এনে রাখেন। আমরা সেদিনের সামরিক কায়দায় পোশাক পরিহিত লম্বা চুল, মুখ ভরতি দাড়ি ও মাথায় টুপি শোভিত এই বীর যোদ্ধাকে কিউবার ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তুলনা করলেও শশাঙ্ক এস বেনার্জি বিশ্বনন্দিত বিপ্লবী চে গ্রুয়েভারার সঙ্গে তার অবয়ব বাতাসে উড়িয়ে একটা সাদা ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে নাটকীয়ভাবে কাদের সিদ্দিকী বঙ্গবন্ধুর সামনে আসেন। ঘোড়া থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে প্রথমে সামরিক কায়দায় অভিবাদন জানান। তারপর পা ছুঁয়ে অস্ত্র সমপণ করেন। যেটি তার নেতার প্রতি অনুগত আচরণ দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল। মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বের জন্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামী মানুষের কাছে কিংবদন্তিই হয়ে ওঠেননি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সম্পদে পরিণত হয়েছিলেন। পারিবারিকভাবে তাদের গোটা পরিবার বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও আদর্শের প্রতি নিজেদের উৎসগ করে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে দীঘ পথ হেঁটেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু তার এই স্বাধীন মাতৃভূমির বীর যোদ্ধাকে একটু বেশি স্নেহ-মমতা দিয়েছিলেন। বাঘা ‍সিদ্দিকীখ্যাত কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম ও জাতির পিতাকে পিতার আসনে বসিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু তাকে সংসদ সদস্য ও বাকশাল ব্যবস্থায় টাঙ্গাইলের জেলা গভনর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। যৌবনে বঙ্গবন্ধু প্রেমে পড়ে আওয়ামী লীগ ও মাতৃভূমীর ভালবাসায় ঋনে বাঁধা পড়েছিলেন এই সাহসী বীর।পঁচাত্তরে 15 আগষ্ট কালরাতে মানবসভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ রাষ্ট্রয় হত্যকান্ড সংঘটিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতার সংগ্রামের ঠিকানা ধানমন্তির 32 নাম্বার বাড়িতে শিশু পুত্র শেখ রাসেল সহ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে পরিবার পরিজন সহ এক দল বিশ্বাসঘাতক নৃশংভাবে হত্য করে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে সেদিন তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মী খন্দকার মোশতাক আহমদ খুনিদের হাত মিলেয়ে খুনিদের প্রহরায় গঠিত অসাংবিধানিক অবৈধ সরকারের রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। ইতিহাস তাকে মীরজাফর হিসাবে কুখ্যাতি দিয়েছেন। সেদিন এ হত্যাকান্ড প্রতিরোদ বা খুনিচক্রকে প্রতিহত করতে রাষ্টের সব বাহিনী ব্যথই হয়নি, অবৈধ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর আওয়ামী লীগ বা বাকশালের সিনিয়র নেতারাও রাজনৈতিক প্রতিরোধের ডাক দিতে ব্যথ হয়ে আত্নগোপনে যান। দেশের স্বাধীনতার জন্য নেতার ডাকে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন, সেই কাদের সিদ্দিকী সেই অনুরুপ আবেগ অনুভতি ও বিশ্বাস থেকে পিতৃহত্যার প্রতিরেধযুদ্ধের ডাক দিয়ে বসলেন। তখন তিনি দলের দায়িত্বশীল পদ-পদবিতে নেই। বঙ্গবন্ধুর চতুথ পুত্র এখনো জীবিত এই কথা বলে তিনি অস্ত্র হাতে বেরিয়ে পড়লেন। খুনি অবৈধ সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে তার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী 18 হাজার তরুন কর্মী অস্ত্রহাতে যুক্ত হলেন। খেয়ে না খেয়ে খুনি ও অবৈধ সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধযুদ্ধে 108 জন বীর যোদ্ধা যারা জাতীয় মুক্তিবাহিনীর ব্যানারে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে প্রতিরোধযুদ্ধে নেমেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     More News Of This Category