জনতার ডেস্ক: গভীর রাতে বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়ে সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে আ’টক ও পরে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদ’ণ্ডের ঘটনায় দোষী প্রমাণিত হলে প্রত্যা’হার হতে পারেন কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীন।এ ঘটনার পর রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার কে. এম. তারিকুল ইসলাম এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্তে ডিসি দোষী প্রমাণিত হলে দুই এক দিনের মধ্যে প্র’ত্যাহার হতে পারেন বলে তদন্ত সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।এদিকে আই’নমন্ত্রী আনিসুল হকের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করতে বলেন। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, জোর করে তুলে নিয়ে ভ্রাম্য’মাণ আদা’লত সাজা দিতে পারেন না। বিশেষ’জ্ঞরা বলছেন, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসন আই’নের অপব্য’বহার করে মোবাইল কোর্টকে প্রশ্নবি’দ্ধ করলেন।জানা যায়, শুক্রবার মধ্যরাতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও আনসার সদস্যদের একটি টিম কুড়িগ্রাম শহরের চড়ুয়াপাড়ায় বাংলা ট্রিবিউনের জেলা প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের বাড়িতে হানা দেয়।এরপর মারধ’র করতে করতে তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তার পোশাক খুলে দুই চোখ বেঁধে নির্যা’তন করা হয়েছে। এসব ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন ডিসি কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাজিম উদ্দিন। এরপর মাদকবি’রোধী অভিযানে আট’ক ও পরে এক বছরের বিনাশ্র’ম কারাদ’ণ্ড দিয়ে জেল হাজতে পাঠান ভ্রাম্য’মাণ আ’দালত।আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার নিতু বলেছেন, মধ্যরাতে বাড়ির দরজা ভে’ঙে ঢুকে আরিফকে পেটা’নো, জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কোনো মা’দক পাওয়া যায়নি। অভিযানের সময় মাদ’কসহ আরিফুল ইসলাম রিগ্যানকে আ’টক করা হয় বলে দাবি করেছেন অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা।মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে শনিবার রংপুর বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মো. মাসুদ রানাকে দিয়ে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির এই সদস্য তাৎক্ষণিকভাবে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করেছেন। তদন্ত শেষে শনিবারই প্রতিবেদন বিভাগীয় কমিশনাররের কাছে জমা দিতে বলা হয়। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে বলেছেন। শিগগিরই এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামও বলেছেন, বিভাগীয় কমিশনারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। সেখান থেকে অতিরিক্ত কমিশনারকে ঘটনাস্থলে পাঠানোও হয়েছে।রংপুর বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার কে. এম. তারিকুল ইসলাম বলেছেন, তদন্ত কর্মকর্তা সরেজমিনে কাজ করছেন। তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।যথাযথভাবে ভ্রাম্য’মাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে কিনা তদন্ত কর্মকর্তা সে বিষয়টি যাচাই করেছেন।মোবাইল কোর্ট পরিচালনা পদ্ধতি সম্পর্কে আ’ইনের ৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সংক্ষি’ব্ধ অভিযোগ লিখিতভাবে গঠন করিয়া উহা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পাঠ ও ব্যাখ্যা করিয়া শুনাইবেন। অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগ স্বীকার করিলে তাহার স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করবেন। অভিযোগ অস্বীকার করিয়া আত্মপক্ষ সমর্থন সন্তোষজনক হইলে অব্যাহতি প্রদান করবেন। অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থন সন্তোষজনক না হলে নির্বাহী ম্যাজিট্রেস্ট তাকে বিচারিক আদা’লতে পাঠাবেন। কিন্তু ভ্রাম্য’মাণ আদালত আ’ইনের কোনো বিধান না মেনে তাকে শা’স্তি দিয়েছেন।অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বাসা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে ভ্রাম্য’মাণ আদালত সাজা দিতে পারে না। গাঁজা-ম’দ যদি ঘরে থেকেও থাকে তবে তা নজরদারিতে রাখবে। মা’দকদ্রব্য যদি কেউ লুকিয়ে রাখে তাহলে মাদ’কদ্রব্য নিয়’ন্ত্রণ অধিদফতর ব্যবস্থা নেবে।তিনি বলেন, ডিসির সম্পর্কে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশের পর এমন ঘটনা ঘটলে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হয়েছে। এতে সন্দেহের অবকাশ নেই।আইনজীবী মনজিল মোর্শেদ বলেন, মোবাইল কোর্ট আই’নের মাধ্যমে এটা করতে পারে না। এটি পুরোপুরি আই’নের অপব্য’বহার। এমন ঘটনা এর আগে বহুবার ঘটেছে। এজন্য আদা’লতে চ্যালেঞ্চ করা হয়েছে। আদা’লত সুষ্ঠু বিচার করেছেন। অনেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে শোকজও করা হয়েছে। কিন্তু আই’নের এই অপব্য’বহার কমেনি। তিনি বলেন, এজন্য সরকারকে ক’ঠিন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তা না হলে মোবাইল কোর্ট আই’নের প্রতি মানুষের আস্থা কমে যাবে।কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক পারভীন সুলতানা বলেন, অ্যাজ ইউজুয়াল টাস্ক ফোর্স অভিযানে গেছে। মা’দকদ্রব নিয়’ন্ত্রণ অফিসের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আমার একজন ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের কয়েকজন ফোর্স, ব্যাটালিয়ান আনসারের পাঁচজন আর মাদ’কদ্রবের তিনজন ছিলেন। তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ ছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই অভিযান হয়। মাদ’ক দ্রব্যই আমাদের কাছে ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছিল।তবে মা’দকদ্রব্য নিয়’ন্ত্রণ অধিদফতরের কুড়িগ্রাম জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আবু জাফর বলেছেন, তিনি এলাকায় ছিলেন না। শনিবার দুপুরে কার্যালয়ের পরিদর্শক জাহিদ সাহেব তাকে জানিয়েছেন, রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের অভিযানের কথা বলে নিয়ে যাওয়া হয়।কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন তার নিজ নামে একটি পুকুর করেছিলেন।আরিফুল এ বিষয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। এ ছাড়া সম্প্র’তি একটি নিয়োগে অনি’য়ম নিয়ে ডিসির বিরু’দ্ধে ফেসবুকে পো’স্ট দিয়েছিলেন। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন বলেন, আমার নামে কোনা পুকুরের নামকরণ হয়নি। এক বছর আগে এমন প্রতিবেদন করেছিলেন আরিফুল। এ জন্য তিনি ক্ষ’মাও চেয়েছেন। ওটা বিষয় না।বিএফইউজে-ডিইউজে ও টিআইবির প্রতি’বাদ: এ ঘটনার প্রতি’বাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।সংগঠন দুটি বলেছে, কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাসভবন থেকে একটি মহল তুলে নিয়ে যাওয়ায় সাংবাদিকদের মধ্যে চরম নিরাপ’ত্তাহীনতা তৈরি করেছে।শনিবার বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এক যৌথ বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।সাংবাদিক আরিফকে মধ্যরাতে ঘর থেকে তুলে আনার পর মোবাইল কোর্টে বিচার করে কারাদ’ণ্ড দেওয়ার পুরো ঘটনাকেই বেআ’ইনি বলে আখ্যায়িত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট আই’ন আছে, সর্বোচ্চ আদা’লতের নির্দেশনা আছে। সে অনুযায়ী রাতের বেলা কোনো নাগরিককে ঘর থেকে তুলে এনে মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা করাটা অবৈ’ধ।এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় মান’ববন্ধন, প্রতিবা’দ সমাবেশ করে সুষ্ঠু বিচার দাবি করা হয়েছে। আরিফের মুক্তির দাবিতে শনিবার কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কে মানবব’ন্ধন করেছেন কুড়িগ্রামে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা।
Leave a Reply